কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ কলাপাড়ায় রামনাবদ ও বঙ্গপসাগরের অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ডুবে ৩০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। তারমধ্েেয বেশী দুর্ভোগে পড়েছে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের ৪৭/৫ পোলন্ডারে জনসাধারন। ৪৭/৫ পোলন্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙে চরচান্দুপাড়া, মন্জ্ঞুপাড়া, মুন্সিপাড়া, নাওয়াপাড়া, চারিপাড়া, বড়পাঁচনম্বর গ্রামে পানি ঢুকে ৫ দিন যাবৎ প্লাবিত। জলাবদ্ধতার কারনে চাষাবাদ ব্যাহত। অনেক বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। তিনদিন যাবৎ এলাকায় বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ীতে রান্নাবান্না করতে পারছে না। কচিকাঁচা শিশু পুত্রকন্যা নিয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করেছেন। রাস্তা ঘাট দুইতিন ফুট পানির নীচ তলিয়ে রয়েছে। এতে পুকুর, মাছের ঘের তলিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছের মালিকদের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া গবাদি পশুর খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। পশুরবুনিয়া গ্রামে থেকে চরচান্দুপাড়া গ্রামে ৪ কিঃমিঃ বেড়িবাঁধ সম্পুর্ন ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে রাস্তাঘাট ভেঙে জনসাধারনের চলাচলের ব্যঘাত সৃষ্টি হয়েছে। লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে চারশ’ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করে কাবিখা’ র আওতায় জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।ঐ বাঁধ ভেঙে এখন মানুষের মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কাজের সিপিসি ও ট্যাগ কর্মকর্তাদের দুনীতির কারনে বাঁধ মেরামতের কয়েকদিনের মধ্যেই তা রামনাবাদ নদীর প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে গোটা এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত। এতে আমন চাষাবাদ ব্যাহত। জনসাধারনের চলাচলে দারুনভাবে দুর্ভোগে পড়েছে চান্দুপাড়া গ্রামের বুড়োজালিয়া জেলে পল্লীর ও চারিপাড়া পয়েন্টের বাঁধ ভাঙ্গা অসহায় পরিবারগুলো। এ দু’ পয়েন্টের কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। যার ফলে ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে আমন ফসলের ক্ষেত। ঘরবাড়ী রাস্তাঘাট ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। যার ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘিœত হচ্ছে।
লালুয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ জাফর আলি হাওলাদার জানান, দীর্ঘ ১৬ দিন যাবত এক টানা অভিরাম বৃষ্টি ও আমবস্যা জােয়ারের পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অন্জ্ঞলের বসবাসরত মানুষ ঘরবাড়ী ছেড়ে ভেড়িবাধেঁ আশ্রয় নিয়েছে। জমাজমি চাষাবাদের আশা ছেড়ে দিয়েছে। কারন বীজতলা বৃষ্টির ও জোয়ারের পানিতে ডুবে বীজতলা সম্পুর্ন নষ্ট হয়েছে। তাই জমাজমি চাষাবাদ করতে হলে পুনরায় বীজ করতে হবে। তবে কৃষকের ঘরে বীজ ধান নেই। সরকার যদি কৃষকদেরকে বীজ ধান সরবারহ অব্যহত রাখে তবে জমাজমি চাষাবদ সম্ভব হবে। অন্যথায জমাজমি অনাবাদী থাকবে। আগামী মৌসুমে কৃষকদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিবে। এতে কৃষকের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় দারুনভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে চরচান্দুপাড়া গ্রামের মোঃ এনামুল হক, সান্টু হাওলাদার, কাশেম তালুকদার, জরিম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরহোসেন খলিফাসহ অনেকের মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে অর্ধ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে বলে তারা দাবী করেছন । এছাড়া চারিপাড়া ফোরকান প্যাদা,শরীফ আলী হাওলাদা, কাশেম হাওলাদার, নাওয়াপাড়া লাভলু গাজী, রকিব মেম্বারসহ ৩০ টি মাছের ঘেরও পুকুর তলিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার মাছ নদী ও সাগরে ভেসে গেছে।
লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বর্তমানে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত থাকায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুছ ফরাজীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারীবর্ষায় ও জোয়ারের পানি মাত্রারিক্তবৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারনের দুর্দশার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে অভিহিত করছি। তারা এখনও সাহায্যে হাত বাড়ায়নি। তবে পায়রা বন্দর নৌবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে কিছু ত্রান সামগ্রী বিতরন করেছেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে উধর্বতন কর্মকর্তাদের অভিহিতকরনের চিঠি পাঠিয়েছি, তবে বরাদ্দ অনুযায়ী ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হবে।
Leave a Reply